ভুল রাস্তার মোড়ে


Leave a comment

নিমফল

 

“মিঠি নিমফল খাবি? ” রানা একগাল হাসল।

“ইস কি তেতো! খায় নাকি ওগুলো কেউ? তুই কি পাগল রে! ’’ মা-র জোর করে খাওয়ানো নিম-বেগুন ভাজার কথা মাথায় আসতেই মিঠির ওক উঠল।

“তুই কি বোকা। নিমফল তো মিষ্টি, নিমপাতা তেতো হয়। ’’ রানা সদর্পে বুক ফুলিয়ে জানান দিল।

“তাই?” চোখ গোলগোল করে তাকায় মিঠি।

“চল চল, ওই ঘোষেদের নিমগাছটায় উঠে আমি গাছ ঝাকান দেব, তুই নিচে দাঁড়িয়ে ফলগুলো কুড়াস। ’’

মিঠি নাচতে নাচতে চললো রানার পেছন পেছন।

“এইই আস্তে আস্তে আয় । শুকনো পাতায় পায়ের শব্দ শুনতে পাবে। ’’ রানা ফিসফিস করে সাবধান করে মিঠিকে।

মিঠি অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু বাবার কিনে দেওয়া নতুন লাল বো দেওয়া জুতোগুলো এমনিতেই এত মচমচ আওয়াজ করে। মিঠির রাগ হয়, রানার ওপর না জুতোর ওপর বুঝতে পারেনা।  রানার কি ভাল, জুতো পড়তে হয় না, ওর মা বকেও না পায়ে ধুলো লাগলে । মিঠি মুখ গোঁজ করে এগোয়।

“দাঁড়া দাঁড়া, এইখানে। ’’ বলেই রানা লাফিয়ে লাফিয়ে গাছে চড়তে থাকে। মিঠি হেসে ফেলে।

একটু ঝাঁকা দিতেই কত্ত কত্ত নিমফল টুপটাপ করে মিঠির গায়ে মাথায় পড়তে থাকে। খিলখিল করে হাসে ও ।

“অ্যাই , তোকে কুড়োতে বললাম না? ’’ রানা নেমে এসেছে ততক্ষণে , এসেই একটা কানমলা মিঠিকে ।

“ লাগছে ছাড় ছাড়, বাবাকে বলে দেব। ’’ মিঠি ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে লাগে।

“বলগে যা। কাকু আমাকে লজেন দেবে, কিচ্ছু বলবে না । ’’

মিঠি কথা না বলে নিমফল কুড়োয় । রানাও অনেক জড়ো করে ময়লা হাফপ্যান্টের  পকেটে পোরে। “চল , আর কাঁদুনিবুড়ি হতে হবে না। ঝিলের পাড়ে চল। ’’ রানা হাত ধরে টান লাগায়।

দুজনে হাত ধরে দৌড়োয় । কাশীনাথের মাঠ , মিত্তিরদের বাঁশবাগান পেরিয়ে তারপর একটা পাটখেতের আল ধরে হেঁটে গিয়ে হল ঝিল।

ঝিলের পাড়ে বসে প্রথম নিমফল খায় মিঠি, খুব ঘেন্না করে। ওমা , পলকে মুখে হাসি। “কি মিষ্টি রে!’’

দেখতে দেখতে দুজনেরই কোঁচড় খালি; পা দুলিয়ে বসে কলমির ঝোপের ওপর লাল ফড়িঙের ওড়াউড়ি ।

“দাঁড়া তুই’’ বলে উঠে যায় রানা। মিনিটখানেক পরেই হাজির হয় কিসব একটা ফুল নিয়ে। সাদা , ছোট। রেললাইনের ধারে অনেক ঝোপ হয় এই ফুলের।

“এই দ্যাখ, এটা এভাবে নাকে পড়তে হয়। ঝুম্পিদিদিকে দেখেছি।’’ রানা ফুলটা মিঠির নাকে আলতো করে লাগিয়ে দেয়। মিঠি হাসে।

“তোকে না পুরো সিদেবী লাগছে। ’’ রানা চোখ মারে।

মিঠি ভয় পেয়ে যায়, টিচার বলেছে চোখ মারা খুব খারাপ জিনিস।

 

 

 

“এইটুকুন খেয়ে নাও তিতির, স্কুলে টপ করতে হবে তো। আর তারপর সুইমিং ক্লাস,… ’’

“না আর খাব নাআআআ! ’’ তিতির টেবিল থেকে উঠে দৌড় লাগায় , এখন চলবে ডাইনিং জুড়ে ছোটাছুটি , একজন মুখে খাবার নিয়ে, আরেকজন প্লেট হাতে। এক নিয়ম রোজ। ভালো লাগে না মিতালির।

“বাবান বাবান …” লাফাতে লাফাতে তিতির গিয়ে জড়িয়ে ধরে সঞ্জয়কে।

“ওলে বাবা লে, আমার পুচু সোনাটা খেয়েছে? ’’

“ সেই শান্তি কি আমার আছে? ’’ মিতালি গুমরোয় পাশ থেকে।

“খেয়ে নাও সোনা, নাহলে কি করে taller, stronger, sharper হবে? ’’ তিতিরকে কোলে তুলে বলে সঞ্জয়।

“ বাবান মা আজকে আবার আমায় papaya খাওয়াচ্ছে। ’’ তিতির কমপ্লেন জানায়।

“ ওকে, আমার সোনাকে খেতে হবে না papaya, আর আমার সোনা আজকে আমার কাছে খাবে। ’’

তিতিরের হাততালির মধ্যে সঞ্জয় মিতালির হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নেয়।

“মেয়েটার সামনে atleast normal behave….’’ মিতালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় দ্রুত।

আজ ১০:৩০ টায়ে  ফার্স্ট ক্লাস, মেয়েকে স্কুলে ড্রপ করতে তো মিতালিকেই হবে। কোনদিন দায়িত্ব নিয়েছে সঞ্জয় একফোঁটাও ? মেয়ের ৪ মাস বয়স থেকেই তো উনি ওদেশে , ওকে স্কুলে ভর্তি, নিজের কলেজ, কম সামলেছে একার হাতে মিতালি ? এখন ইন্ডিয়াতে ফিরেও কি একদিনও সংসারে এতোটুকু contribute করেছে? আর এখন তো, থাক ওসব।

বডি ওয়াশের নরম গন্ধ আর ঈষৎ উষ্ণ শাওয়ারের জলে ডুবে যেতে থাকে সারারাতের ক্লান্তি।  হাঁটুর কাছে আর ঘাড়ের কোণে এখনও কালশিটে । জ্বালা করছে সাবানজল লেগে। মিতালি দাঁত চেপে থাকে। তিতিরটা আরেকটু বড় হোক।

ফ্ল্যাটের পেছনে ফাঁকা জমি আগাছার ঝোপে ভরে আছে। কোথা থেকে একটা জংলা পারথেনিয়ামের গন্ধ সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে দিয়ে ভেসে আসছে। মিতালি হারিয়ে যায় , অতলে।

 

 

“ বাবা মিঠিকে টিভিতে দেখলেন? ওই মাধ্যমিক রেজাল্টের পর? ’’ মা দাদুকে প্রনাম করতে করতে বলে।

“হ্যাঁ গো বউমা, দেখলুম মিঠিসোনাকে । ’’ দাদু মিঠির মাথায় শীর্ণ হাত বুলিয়ে দেন।

“দিদিভাই, নাড়ু খাবি? ’’ ঠাম্মা ডাক পাড়েন দরজার আড়াল থেকে।

“তিলের নাড়ু আছে ঠাম্মা? ’’ মিঠি হরিনপায়ে অদৃশ্য হয় পর্দার আড়ালে।

“ দেখেছ? আরে মেয়েটা , স্নানটা করে নে তো! কতক্ষণ ট্রেন জার্নি করে এলো… কোন বুদ্ধি আছে? ’’

“থাক বউমা, কতবছর পরে এলো বলো তো মেয়েটা। ’’

“হ্যাঁ দু বছর প্রায় ।’’ বাবা জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে উত্তর দেয়।

 

দুহাতে চারখানা নাড়ু নিয়ে মিঠি চুপিচুপি খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে পরে। এখন ভরা রোদ, কিন্তু দাদুদের এই আমবাগানটা সারাবছর ছায়া ছায়া। পাকা পাকা সিঁদুরে আম ঝুলছে সব গাছ থেকে। ধুর এত্তদিন এই পড়া পড়া করে আটকে রেখেছে মা বাবা, মনটাই ভালো হয়ে যায় এখানে আসলে।

মাটির রাস্তাটার শেষে বাদিকে রানাদের ঘর । টালির চাল, ছিটেবেড়ার দেওয়াল। উঠোনে এক কোণে বাতিল ঝুড়ি , প্লাস্টিকের কাপ,বালতি ডাই করে রাখা, আরেকদিকে ওদের পোষা হাঁসের ঘর। কত খেলেছে মিঠি ওদের উঠোনে। আর ওর মা কি দারুণ রসুনের আচার বানায়। মাঝে মাঝেই মা কে না বলে রানার সাথে বসে শাপলা, কচু , আচার , লঙ্কা দিয়ে ভাত মেখে খেয়েছে কত! আজকে সেসব মনে পড়ে খুব খুশি লাগছিল মিঠির কেন জানি।

 

দুবছর আগে একদিন বিকেলে রানার সাথে সেই ঝিলে গেছিল মিঠি। রানার বন্ধু বিলু, ওর বাবা মাছ ধরে। একটা ডোঙা ভেড়ানো  ছিল পাড়ে, বিলুর বাবার। খুব সন্তর্পণে উঠেছিল দুজনে, একটু এদিক ওদিক করলেই সোজা জলে। রানা ওপাড়ে নিয়ে গিয়েছিল। ওপাড়ে পুরো অন্য আরেকটা জগৎ যেন। তখন পুজো সবে শেষ হয়েছে, ত্রয়োদশী ছিল বোধহয়। আকাশটা মিঠি আঁকার স্কুলে যেমন শিখেছে , পুরো সেরকম ছিল, ওপরে vermilion আর নিচে chrome yellow. মিঠি সোৎসাহে রানাকে রঙগুলো চেনাচ্ছিল। রানার যদিও সেরম একটা আগ্রহ নেই। ওপাড়ে নামতেই , দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুলের বন… হাত কেটে গেছিল মিঠির কাশের ধারালো ঘাসে , রানা সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুখে পুরে নিয়েছিল ওর আঙুলটা, মিঠির মনে আছে। আর তার মাঝে ছিল একটা বড় শিরিষ গাছ। তার তলায় রানা মিঠিকে একটা কাঁচের গ্লোব মতন জিনিস দিয়েছিল, তার ভেতরে জলের মধ্যে চিকচিকি, একজোড়া সাহেব মেম, বলডান্স করছে।

“ মিঠি এটা তোর জন্য। রথের মেলা থেকে কিনেছি। ’’ রানা বেশ গর্বের সাথে বলে, “ নিজের টাকায়।’’

“ওমা, কি সুন্দর রে!’’ মিঠির খুব সুন্দর একটা মিউজিক বক্স আছে, খুললে মিউজিক বাজে, আর বলডান্স করে দুজন, ছোটমামা দিয়েছে দিল্লি থেকে। কিন্তু এটা যেন আরও সুন্দর তার চেয়েও। সস্তার গোলাপি রিবনে মোড়া , কিন্তু কি সুন্দর একটা আভা বেরোচ্ছে যেন ওটা থেকে।

মিঠি ফস করে কি মনে হয়, রানার গালে একটা চুমু খেয়ে বসে।

রানা চমকে ওঠে।   মিঠি খিলখিল করে হেসে ওঠে।

“রানা জানিস এরা দুজন কি করছে? ’’ মিঠি খোঁচায় ।

“কি আবার? নাচ! ’’ রানা মুখ নামিয়ে আঁকিবুঁকি কাটে মাটিতে।

“ উঁহু, এটাকে বলে বলডান্স। শিখবি? ’’

“ তুই জানিস? ’’ বিস্ময়ে হা করে তাকায় রানা।

“ হ্যাঁ তো, অ্যানুয়াল ফাংশানে আমি আর অঙ্কুশ পারফর্ম করেছিলাম একটা নাটকে । ’’

“অঙ্কুশ কে? ’’ রানা চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করে।

“ কে আবার?  আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার পাশে বসে সবসময় ক্লাসে। ’’ মিঠি মিষ্টি হেসে বলে।

হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে যায় রানা।

“চল বাড়ি চল। দেরি হলে সবাই খুঁজবে আমাদের।’’ রানা ডোঙাতে উঠে দাঁড়ায়।

মিঠি ঘাবড়ে গিয়ে ওর পিছু পিছু যায়।

পাড়ে ফিরতে না ফিরতেই দূর থেকে বাবা মা আর রানার বাবা দিনুকাকুকে চোখে পড়ে । সবার মুখে আষাঢ়ে মেঘ।

দিনুকাকু রানাকে সেদিন মারতে মারতে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। বাবা মায়ের “কতবার বারণ করব এখন বড় হয়েছ, যার তার সাথে যেখানে খুশি যাবে না… কলি, ঋত্বিক, সুহানা ওদের সাথে মেশো , আর কত বন্ধু চাই?…’’ শুনে কান্না পায়নি ওর, মিঠির কান্না পেয়েছিল রানা একবারও মুখ ঘুরে তাকালো না বলে।

 

“কাকিমা? ভালো আছ ? ’’ মাধ্যমিকে কলকাতায় টপার মিতালি উঁকি মারে ঘরের ভিতর।

“কে? ওমা, আমাদের মিঠিরানি? কবে এলি মা? ’’ রানার মা ছুটে আসে দেখতে পেয়ে। ছেঁড়া শাড়িতে  তিন জায়গায় তাপ্পি।

“আজকেই।’’

“ আয় মা বোস। তুই কত ভালো রেজাল করলি রে, টিভিতে দেখালো। সবাই দেখলাম গ্রামের লোক মিলে, নে মা মোয়া খা। ’’ কাকিমা মোয়া ধরিয়ে দিল মিঠির হাতে একটা।

“রানা কই? ’’

“রানা তো একন ওর বাবার সাথে টাউনে যায়, ওই হাতে হাতে জোগাড়ের কাজ করে দেয়। ’’ রানার বাবা দিনমজুর। “ এই তো ফিরবে আরেকটু পরেই, বোস। ’’

“না কাকিমা আজ আসি, পরে আবার আসব। ’’ মিঠি উঠে পড়ে।

 

সেবার আর যাওয়া হয়নি রানার বাড়ি। কিন্তু দেখা হয়েছিল রানার সাথে। একদিন খুব সকালে, কাকডাকা ভোরে। রানার  “ কেমন আছিস? খুব ভালো রেজাল্ট করলি তো”-র ফাঁকে দুফোঁটা চোখের জল মিশে ছিল, মুছিয়ে দিতে সাহস হয়নি মিঠির।

 

তারপর দাদু চলে যাওয়ার পর গিয়েছিল দেশে। বিষণ্ণ এককোণে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে শ্মশানযাত্রীদের মধ্যে থেকে একজন হেসেছিল ওর দিকে তাকিয়ে। তাল কেটে গিয়েছিল সঞ্জয় ফোন করাতে। মিঠির বয়ফ্রেন্ড।

আর তারপর শেষ যাওয়া সঞ্জয়ের সাথে বিয়ের একমাস আগে। আইবুড়োভাত খাইয়েছিল কাকু-কাকিমা। কোন দিনমজুরের ছেলের খোঁজ পড়েনি আর।

 

 

কাল রাতে আবার মিতালির গায়ে হাত তুলেছে সঞ্জয়। এই নিয়ে ৪-৫ মাস হল চলছে। রেগুলার। ওর ফোনে আপত্তিকর মেসেজগুলো দেখেছিল ঠিক ৩ মাস আগে, সন্দেহ যদিও আগের থেকেই ছিল। confront করলেই সেটা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যেত। অতবড় রাক্ষুসে লোকটার সাথে পেরে উঠবে কি করে মিঠি?

বেশি অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেলে জোর করে মিলিত হওয়ার চেষ্টা। সঞ্জয়টাকে আর মানুষ বলে মনে হয় না মিতালির।  এত ছোট একটা মেয়ে থাকতেও যার আরেকজনের সাথে সম্পর্ক , তাকে আর…

 

কিন্তু সেদিন লিমিট ক্রস করে গেল সঞ্জয় , মেয়ের সামনেই মিতালির গায়ে হাত তুলল । মেয়েটা পুরো দিনটা ভয়ে কান্নাকাটি , ঘর থেকেই বেরোতে চাইছিল না।  মিতালি অনেক সহ্য করেছিল, মেয়ে বড় হোক আরেকটু, কিন্তু এরপর আর মনে হয় দেরি করাটা সমীচীন নয়।

সেদিন দুপুরে মেয়েকে কোলে নিয়ে জানলার ধারে ঠায় বসে ছিল মিতালি।

“মামমাম , তুমি কি দুষ্টুমি করেছ? তাহলে বাবান তোমাকে মারল কেন? ’’

“হ্যাঁ তিতির, আমি খুব একটা বড় দুষ্টুমি করেছি, তাই বাবান খুব বকে দিয়েছে আমাকে।’’

“এমা, মামমাম দুষ্টু , মামমাম আমার থেকেও দুষ্টু।’’

মিতালি চুপ হয়ে থাকে । তিতির বকবক করতে করতে ওটা কি পাখি, ওটা কি ট্রি তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অচিরেই। সত্যিই তো , মামমাম কি কোনদিন তাকে কোলে করে বসে আর জানলা দিয়ে পাখি গুনেছে?

“ ওটা নিমগাছ তিতির , ওই যে খুব তেতো হয়, তোমাকে একবার খেতে হয়েছিল যখন তোমার পেটব্যাথা হয়েছিল, মনে আছে? ’’

“ ইয়াক, ওটা খুব বাজে। মামমাম দ্যাখো ক্রো টা ওই ফ্রুটটা খেতে যাচ্ছে, কি বোকা কাক টা। এই কাক যা যা, শুঃ ! ’’

মিতালি চমকে ওঠে। নিমফল! না রে পাগলি , তেতো নয় রে, তেতো নয়।

 

 

চশমার ঝাপসা কাঁচের আড়ালে দুজোড়া উজ্জ্বল চোখ নিয়ে উঠে দাঁড়ায় মিতালি। মেয়েকে কোলে নিয়ে।  IRCTC-র সাইট । অনলাইন টিকেট বুকিংটা সেরে ফেলতে হবে, সেই স্বপ্নের দেশটার।

 

যেখানে নিমফল আর পারথেনিয়াম আর কলমির গন্ধে সুখের স্বপ্ন দেখা যায়। যেখানে দিনমজুরের ছেলে রাজা আর মিঠিরানি ঘর বাঁধে শাল-শিরিষের ছায়ায়।

472

 

 

 


2 Comments

 মিমিক্রি

লাস্ট কয়েকদিন ধরে সপ্তাহান্তের মধ্যবিত্ত বাজারের থলির মতো অনেক এলোমেলো চিন্তা আর স্মৃতি যেন উপচে পড়ছে। কিছু একটা অজানা insecurity তে সবসময় ভুগতো নদী, সুযোগ পেলেই শুধু সাম্য কে ফোন। দিনে ৪-৫ বার, বেরে সেটা প্রায় ২০-২১ ভার হয়ে গেছিল। সাম্য রেগে যেত, যে কারো রেগে যাওয়া স্বাভাবিক, অফিসে জরুরি মিটিং চলছে, তখন ফোন। বাড়িতে কাকু এসেছেন দু-বছর বাদে, তখন ফোনে কথা বলতে হবে। কিংবা রাস্তা ক্রস করছে, তখন মোবাইলে টুংটাং।

“তোর কাউন্সেলিং করানো উচিত নদী। ’’

প্রথমে শুনে রেগে গিয়েছিল ও।

“ওহ! আমি তোর বেশি খোঁজ রাখতে চাই বলে এরকম বলবি? মা-র একসময় একটু প্রবলেম হয়েছিল বলে আমিও পাগল? তোর এক্স অনেক ভালো ছিল আমার চেয়ে বল? Cheating behind your back!! সেটা অনেক ভালো, না?.. ’’ নিজের গলাটা যে কখন পাবলিক বাসে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বুঝতে পারেনি।

“শান্ত হ । Calm down নদী। ’’  ঠাণ্ডা দৃঢ় গলায় বলে সাম্য।

চমকে ওঠে নদী। “আমি তো এরকম ছিলাম না। ’’ অস্ফুটে বলে ।

সেই শুরু, গত ৩ মাস ধরে এটাই রুটিন মোটামুটি ওদের। কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। বেশ কয়েকবার অনেক কিছু বলে ফোন কেটে দিয়েছে সাম্যর মুখের ওপর ।সাম্যর চেয়ে বেটার কেউ ওকে চেনে না। খানিক পরে আবার নিজেই ঝরঝর করে কান্না।

প্রশ্নটা যে compatibility –র নয়, বুঝিয়েছে ওকে সাম্য।

পেপার টাও accepted হয়নি নদীর। এত বড় একটা আন্তর্জাতিক সেমিনার, কত আশা ছিল এতদিনের। ভীষণ খেটেছিল পেপারটা নিয়ে । বোঝাল অনেক কাল রাতে সাম্য।

এলোমেলো লাগছিল। বড্ড কান্না পাচ্ছে। ডাঃ দাসগুপ্তা বলেছেন রেগুলার ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে। ঘুম হয়না এমনিতে নদীর।

“আমার রাত জাগা তারা, তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি……” বেজে ওঠে ফোন।

“হ্যালো , সাম্য? ’’ জড়ানো গলায় বলে নদী। খুব ঘুম পায় আলজোলামে।

“সাম্য… কে?”

“কে?” উঠে বসে নদী, ডাইনিং স্পেস থেকে ৩টে ঘণ্টার সুরেলা আবর্ত কে কেটে দিয়ে কোথায় একটা বেসুরো রাতচরা পাখি ডেকে ওঠে।

“ইকবাল বলছি, ভালো আছো? ’’

বিস্ফারিত ভাবে জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটে নদী।

“হ্যালো? ’’ ওপ্রান্তে প্রশ্ন।

“হু? আছি। আমি ভালো আছি। তুমি? ’’ সম্বিত ফেরে নদীর।

“আছি, বেশ আছি একরকম। ’’ ইকবালের গলাটা এত গম্ভীর ছিল আগে?

“ ফারিয়া ? ’’ বলেই সামলে গেল নদী।

“তুমি জানো ওর নাম? আছে, ভালোই আছে। ’’ ইকবাল এতটা মার্জিত ছিল আগে?

“ জানি। ’’ একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে এপারে, অজান্তেই।

“হুম।’’

দু প্রান্তই চুপ।

“কি করছ এখন? ’’ নিস্তব্ধতা ভেঙে অল্প জল ছলকে ওঠে নদীতে।

“নেট ক্লিয়ার করেছি এই মাসেই, ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পড়বে এবার। ’’  ডাক পড়বে? এতটা কাব্যিক ছিল ইকবাল? ফারিয়া খুব ভালো রেখেছে।

“বাহ! কনগ্র্যাটস! ’’

“থ্যাংকস।’’

ক্যালেন্ডারে হিমবাহর ছবি, বরফনদী। পাশে বাবা লাল কালি দিয়ে এমাসের ভর্তুকির গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়ার তারিখ টা লিখে রেখেছে।

“নদী?’’

“বলো।’’

“ পড়াশুনো কেমন চলছে? বাড়িতে এখন সব ওকে? ’’

চোখটা জ্বলছে খুব।

“কেন ফোন করেছ ইকবাল?’’

“ এমনি, কেমন আছো জানার জন্য।’’ ইকবাল ২ সেকেন্ড থেমে উত্তর দেয়।

“ সত্যি বলো ইকবাল।’’ উফ! এই কাঠখোট্টা সাম্যটার সাথে থেকে থেকে না বড় ঠোঁটকাটা হয়ে গেছে নদী। ইশ, কি ভাববে এবার?

“ উমম…মানে আসলে, তুমি সত্যি ভালো আছো নদী?’’ এতক্ষণে পুরনো এক টুকরো ছবি যেন উঁকি মারল নদীর মনে।

“আছি ইকবাল।’’

“ বয়ফ্রেন্ড?”

“ও ভালো আছে। খুব ভালো রেখেছে আমাকে। ভীষণ ভালো আছি আমি সাম্যর সাথে । ’’

“ও, যাক ভালো। ’’

“ ওকে”

“বাড়িতে জানে, দুজনেরই। আর আমার বাড়িতে সবাই ভাল আছে। সাম্যর জন্য।’’ নদী বয়ে চলে।

“গুড” এপার থেকেও যেন ইকবালের সেই শান্ত স্তিমিত হাসি টা দেখতে পায় নদী।

“নাইট” থেমে যোগ করে ইকবাল।

অস্ফুটে একটা “এখনও” বেরিয়ে আসে , নদী ফোনটা কেটে দেয়।

 

“নদী?”

“এটা কার নাম্বার, ইকবাল?’’

“আমার, নতুন। ’’

“ ও আসলে আগেরটা আমার মুখস্থ ছিল ……আছে” অস্ফুটে যোগ হয়।

“ আজ আবার ফোন করলে? ’’

“ ইচ্ছে হল, বড্ড। ’’ এটা অচেনা শব্দ, ইকবালের মুখে।

“ ইকবাল? ফারিয়ার সাথে সব ওকে তো? ’’ নদী হালকা আগ্রহ দেখায়।

“ হ্যাঁ , একদম। আই অ্যাম রিয়েলি হ্যাপি। ’’ ইকবাল অনেক বদলে গেছে। এত উৎফুল্ল , এত আবেগ কোনদিন তো! কি জানি ওই মেয়েটা কি দিয়েছে এমন। শরীর? যেই শরীরের ওপর একদিন পাগলের মত মোহ ছিল ইকবালের, কিছুই কি কোনদিন…? ছি, কিসব ভাবছে ও।

“ ইকবাল, আমি রাখছি, এই নিয়ে ৩দিন হল আজ, আমার ঘুমনো দরকার রাতে, ডক্টর বলেছেন। আমি ঘুমুচ্ছিনা জানলে সাম্য ভীষণ রেগে যাবে। ’’ নদী গম্ভীর গলায় জানান দেয়।

“সাম্য, সাম্য তোমাকে বকে না, খুব? ’’

“মোটেও না । আর এমনিতেও  দ্যাটস নান অফ ইয়োর বিজনেস। ’’ নদীর সত্যি রাগ হচ্ছে এবার।

“ ওকে, তাহলে বাই। ’’ ওপারে একটা ঘন দীর্ঘশ্বাস।

“ইকবাল, কেন? কেন? কেন করলে ওরকম? ’’ নদীর বাঁধ ভাঙল । ডান চোখটা খুব জ্বলে কাঁদলে আজকাল, কতদিন কাঁদেনি বল তো?

“তুমি কারণটা জানো, নদী। মেনে নিত না আম্মু বা আব্বা কেউই। ’’ ঠাণ্ডা গলায় উত্তর আসে।

“আম্মু?!” নদী কেমন চমকে ওঠে । ইকবাল মা বলতো তো, ওর আম্মুকে! এই নিয়ে কথাও হয়েছে ওদের সেই একদিন। কি জানি, ওটাও হয়তো একটা অভিনয় ছিল। পুরো সম্পর্কটার মতনই।

গুড নাইট ইকবাল।

“ বাই নদী। ’’

পিইইক করে ফোনটা কেটে যাওয়ার আওয়াজে কেঁপে ওঠে কেমন নদী।

 

আরও ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা। আবার নিশ্চয়ই আসবে ফোন। নিশ্চয়ই। ইকবাল আবার আমাকে ভুলতে পারছে না। কেমন যেন ঘোরের মধ্যে থাকে সারাদিন নদী। স্মৃতির ঘোর। সাম্যর ফোন খেয়ালই করেনি দুবার। ইকবাল। সেই ইকবাল।

সেই প্রথম ভিক্টোরিয়া, প্রথম চুমু, প্রথম আদর, প্রিন্সেপ ঘাট, প্রথম প্রেমের ইকবাল।

 

এগারোটায় সাম্য ফোন করেছিল, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড় , একদম রাত জাগবি না, ইত্যাদি ইত্যাদি। “ আই লাভ ইউ নদী ’’-র উত্তরে আজ প্রথমবার “বাই সাম্য” ভেসে এলো।

সাম্য। অসাধারণ একটা ছেলে, সবদিক থেকে। বলে শেষ করা যাবেনা ওর গুণের লিস্টি। এখন চাকরি করে আইটি তে, কিন্ত একসময় নাট্যজগতের রীতিমত দাপুটে অভিনেতা ছিল। এখন অনিয়মিত হয়ে গেছে থিয়েটার। আর লেখকও  বটে সেই লেভেলের। এই এটুকু বয়েসেই কতকিছু অ্যাচিভ করেছে। লেখার থেকেই তো সব শুরু ওদের। নদী স্মিত হাসে। আর নদীর সবচেয়ে পছন্দের গুণ, সাম্যর দুর্দান্ত ভয়েস মিমিক্রি করার ক্ষমতা। এমন হুবহু নকল করে এক একজনের গলা, অমিতাভের টা তো পুরোপুরি । এমনিতে গলাটা মিহি, কিন্তু ফলস ব্যারিটোন টা সেরা করে কিন্তু সাম্য। গানটাও ভালো গায়, একটা মাঝারি বাজেটের বাংলা আর্ট ফিল্মে , পরিচালক ওর বন্ধুস্থানীয় ,একবার একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিল, অনেকদিন বিগ বি তকমা পিছু ছাড়েনি। নদী হাসে, আপনমনে ।

“ওগো নদী আপনবেগে পাগলপারা …’’ মাতলার তীরে সাম্য শুনিয়েছিল ওকে।

কত ভাল সাম্য। কোন তুলনা হয় ওই স্বার্থপর , সমাজভীরু, শরীরসর্বস্ব  ছেলেটার সাথে। তবু কেন পিঠের পুরনো ক্ষতটার মতো ইকবাল থেকে এখনও রক্তক্ষরণ হয়?

১ টা।

২টো ।

৩ টে।

ঘুম নেই নদীর চোখে আজ। ওষুধ খায়নি আজও, কালকের মতই।

কিন্তু ফোন এলো না তো? ৩ টে তো বাজে! ইকবাল তবে আর করবে না? ইস, কেন যে বলতে গেল ওভাবে ? শুধুই তো বন্ধুত্ব এখন ওদের মধ্যে, ইস, সেটাও নষ্ট করল, জেনেবুঝে।

আবার সেই অবিন্যস্ত ভাবটা গ্রাস করছিল নদীকে। কি করবে? বালিশে মুখ গুঁজে আবার সেই ভাঙা চিৎকার। আবার সেই শ্বাসকষ্ট , ইনহেলার। সাম্যকে কল করবে? করল , দুবার রিং হতেই কেটে দিল। না আজকে নয়। আজকে আবার নদী পুরনো ফ্রেম গুলোকে জীবন্ত করে তুলবেই একটা একটা করে ছুঁয়ে । সাম্যর অধিকার নেই সেখানে।

৩-৩৫। মোবাইলের আলোয় চোখে খানিক ধাঁধাঁ লাগে নদীর, অন্ধকারে। টেবিলল্যাম্প টা জ্বেলে ড্রয়ার হাতড়ায়ে, খেয়েই নেব অ্যালজোলাম, মানে হয়না এসব অতীতকে প্রশ্রয় দেওয়ার, এক্ মুহূর্তের জন্য মনে হয় লুকিয়ে কেনা Marlboro-র প্যাকেটটা পাওয়া অবধি। সাম্য প্রমিস করিয়ে ছাড়িয়েছিল নেশা টা।

একটার পর একটা। অনেকদিন বাদে আজ “নদী আপনবেগে পাগলপারা” … জল শুকিয়ে গাল গুলো কেমন চিটচিট করছে।

আর নয়।

মোবাইলটা কাছে টেনে নিয়ে নদী আগের রাতের কললিস্ট ঘাটে।

 

“নদী? তুমি?’’ ঈষৎ জড়ানো আর চমকে যাওয়া গলায় ইকবাল বলে।

“আজ ফোন করনি কেন ইকবাল? ’’

“মানে, আর কি, তুমি কাল ওরকম বললে…”

নদী ইকবালের কথা কেড়ে নিয়ে বলতে থাকে “তো? তার মানেই সেটা সত্যি? তুমি সত্যি একটুও কি কোনদিন বুঝেছিলে আমাকে ইকবাল? একটুও? ’’

নিস্তব্ধতার একটা অদ্ভুত দোষ আছে, পিন, ঘড়ি নয়, নিজের অবিশ্বাস্য হৃদস্পন্দনেরও জানান দিয়ে দেয়।

“কি চাও ইকবাল? সত্যি করে বলো! ’’

“নদী, সত্যিটা শুনবে?

“বল”

“ তোমাকে চাই, তোমার শরীরটাকে শুধু। চাই, আরেকবার, বারবার। আমি ভুলতে পারছিনা ওগুলো শুধু । এখনও তোমার ওই ছবিগুলো; ছবিগুলো নিয়ে আমি fantasize করি…’’

“ কাল বিকেল ৪টে, প্রিন্সেপ ঘাটের সেই জায়গাটার সামনে। ’’ দৃঢ় গলায় বলে নদী কেটে দেয় ফোনটা।

এবার ঘুমোবে ও। ওষুধ ছাড়াই।

 

নীল সালওয়ার কামিজটা, ওদের, ওর আর ইকবালের প্রথম দেখা হওয়ার দিনের…আর একটা ছোট ব্যাগ হাতে।  নদী ঘড়ির দিকে তাকায় বারবার হাঁটতে হাঁটতে।

 

ইকবাল কোনদিন তো লেট করত না। ভীষণ স্বভাববিরুদ্ধ এটা ওর। আজ আসবেই ও, নদী জানে। সেই কবে যেন? কেমিস্ট্রি পরীক্ষার দিন লাস্ট দেখা হয়েছিল। তারপর দূর থেকে যতবারই দেখেছে, ইকবাল সরে গেছে আড়ালে।

সারাদিন সাম্যর ফোন ধরেনি নদী। আজকের দিনটা শুধু ওর, নিজের।

 

“সাম্য?! তুমি? এখানে কি করছ? ” নদী দূর থেকেই চিৎকার করল, চেনা অবয়বটা unexpected জায়গাটায় দেখতে পেয়ে ।

“এই জায়গাটায়? মানে? তুমি ?!কি হচ্ছে টা কি এসব?”

সাম্য কি কাঁদছে? চশমার পেছনে চোখ পুরো ঘোলাটে। “নদী, ভাবিনি এরকমটা করবি শেষে!’’ সাম্যর গলা ধরে আসে।

কি করে জানলো এসব কিছু মাথায় নেই আর নদীর। সাম্য? ওর সাম্য ? কাঁদছে? আজ ওর জন্য?

“সাম্য!! শোনো আমার কথাটা প্লিজ হিয়ার মি আউট ফার্স্ট।’’ নদীও আজ উথালপাথাল।

ঢেউ গুনছে একটা কাপল, অদূরেই ।

“নদী, আমার বোঝার আর কিছু নেই রে, একটা ছোট্ট টেস্ট করেছিলুম জাস্ট , ভেবেছিলুম তুই পাশ করবি, তাই করেওছিলিস, কেন ফোন করলি আবার কাল রাত্রে? কেন? ছি নদী! পারলি তুই কি করে এটা?

“টেস্ট? মানে?’’ নদী কেমন আনমন   হয়ে যায়।

“ইকবাল নয়, ফোনগুলো আমি করতাম। তোর ফোনে একবার ইকবালের কয়েকটা whatsapp record পেয়েছিলাম, তুই ভুলেই ডিলিট করিসনি জানি। ওটা থেকে গলাটা রপ্ত করে… তুই ওষুধের ঘোরে অত বুঝিসনি …কিন্তু নদী তুই এটা? ……”

 

“কী??? সাম্য? তুমি? ’’ ঝড়ের আগের মুহূর্তের থমথমে স্তব্ধতার মধ্যে নদী ব্যাগ থেকে ২ টো ছিঁড়ে টুকরো করা চিঠি, আর আধপোড়া বেশ কয়েকটা ছোট জিনিস বের করে করে ছুঁড়ে ফেলতে থাকে সাম্যর পায়ের দিকে। শেষে একমুঠো ছাই বের করে হাওয়ায় ভাসতে দেয়।

“ইকবালের মুখের ওপর এগুলো ছুঁড়ে দিতে এসেছিলাম সাম্য। আর ওর এই অনেকদিনের প্রাপ্যটা। ”

একটা সপাটে চড় এসে পড়ে সাম্যর গালে। নদী হাঁপাচ্ছে ।

“নদী আর ইউ ওকে?’’ সাম্য শকটা সামলে উঠে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

“আই উইল বি। ”

দাঁতে দাঁত চেপে সাম্যর দিকে পেছন ফিরে হাঁটতে শুরু করে নদী। আজ অনেক ওষুধ খাওয়ার আছে। অনেক।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


Leave a comment

কাটাকুটি

“আজ এই LBD টা পরব কিন্তু। What do you say?” ওয়ার্ডরোবের ভেতরের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে শালিনীর জড়ানো আওয়াজ টা নীলের কানে পৌঁছেও পৌঁছল না । আজ মন ভালো নেই নীলের, যেই ম্যাগাজিনের সাথে লাস্ট ৪ মাস কাজ করছিল, ইন্টার্নশিপ, আজ ক্যান্সেল হয়ে গেছে। ওর দোষ ও কাজে হোক জীবনের ক্ষেত্রে হোক কিছু বেসিক এথিকস মেনে চলে। তথাকথিত urban reader এর চাহিদা অনুযায়ী ও পারেনি ওর সিগনেচার কাজগুলো একের পর এক made up, মুখরোচক আর্টিকেলএ ব্যবহার করা টা মেনে নিতে। আজ তাই ডেকে অপমান করে কাজের অযোগ্য বলে তাড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল স্যার, বিখ্যাত ফোটোগ্রাফার ।একদিন যার সাঙ্গ পেয়ে জীবন ধন্য ভেবেছিল, আজ তার বাঁকা হাসিটা বিষিয়ে দিচ্ছে ভেতর টা। আনমনে শালিনীর নতুন পাওয়া ফ্ল্যাটের সুদৃশ্য কাঁচের সেন্টার টেবিলে আঁকছিল নীল, একটা কাটাকুটির ছক। নিজেকে কেমন মনে হচ্ছিল সেই লম্বালম্বি আর কোণাকুণি দুভাবেই অনেক অদৃশ্য ক্রসের মাঝখানে থমকে যাওয়া একটা অসমাপ্ত বৃত্ত।

ঊফফ শালুক , একটু নিজে decide কর না! নীল গজগজ করে অস্ফুটে। আজ ওদের এক বছর, celebrate করা হবে Marco Polo তে, শালিনীর নতুন পাওয়া প্রমোশনেরও উদযাপন।

“এই দাঁড়া দাঁড়া, LBD কেন?” বলতে বলতে নিজেই উঠে যায় নীল।

নীল চেয়েছিল ওদের একমাসের দিনের মত সেই বাসা হারানো দুটো পাখি হয়ে, অচেনা রাস্তা ধরে, অজানা বাসে চেপে বসে, অনির্দিষ্ট সেইরকম একটা পুকুরপাড়ে বসে কনে দেখা আলোয় এলোমেলো চুলের আদরে উচ্ছলিত শালুকের একটা দুটো ছবি নিতে , আর ছোট্ট কিছু আলগোছ ব্যারিকেড, ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট। শালিনীর বিরক্তির সঙ্গে খেলা কাটাকুটি তে হেরে গেছে নীল, কে জানে কেন। তাই আজ Marco Polo।

“কেন? খারাপ কিসে?” শালিনী রেগে যায়।

শালিনী কে নীল এখনও জানায়নি, ওর জব টা চলে যাওয়ার কথা।

বুকের কোথাও একটা ভীষণ চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে; চেনে নীল এটা কে। ঠিক এরকমই হয়েছিল মা যখন শয্যাশায়ী, যেদিন ভোরে মা চলে গেল, তার আগের রাতে। ঠিক এরকমই ব্যথা হয়েছিল ওর পোষা টিয়া একটু অসাবধানের সুযোগ নিয়ে উড়ে যাওয়ার আগে। যাক ওসব, নীল নিজেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।

“ব্যাঙ্গালোর থেকে ওই নীল শাড়ি টা এনেছিলি , ওই টা পর না , তোকে অসম্ভব সুন্দর দেখায় !” নীল আলতো কামড় বসায় ওর কানে।

“ইস কত শখ ছেলের । যা তো, আমাকে রেডি হতে দে।“

“ওয়েট শালুক , you know what to do!” নীল চোখ টেপে।

“নীল , not now! We are already late!” শালিনী সযত্নে কেয়ারি করা ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত ভাবে তাকায় , কোথাও একটা না’বলা ভেসে আসে, “ডিসগাসটিং!”।

নীল ততক্ষণে পেন দিয়ে নিজের হাতে একেও ফেলেছে, ছোট্ট একটা কাটাকুটির ছক।

“শালুক, তুই তো ক্রস!”  নীল এর চোখের কোণ ভিজে এসেছে আজ।

ছেলেটা মেট্রোর দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে একমনে হাতে আকিবুকি কাটছিল। শালিনী সিটে বসে, ফাঁকা ট্রেন বাস মেট্রোয়ে মানুষ কে খুটিয়ে observe করা তার অভ্যেস । শালিনী আনমনা ছিল, সদ্য ব্রেক আপ, বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টার প্রছন্ন একটা আভাস কালকেই পেয়েছে মা বাবার চাপা আলোচনায়।

ছেলেটা কেমন অদ্ভুত, একবার কিসব আঁকছে হাতে, আবার ঘষে পেন দিয়ে তুলছে আবার আঁকছে। কোঁকড়া চুল টেনে একটা পনিটেল করা। একটা খাদির কুর্তা আর নীল ডেনিম পরনে। টিপিক্যাল আতেল। শালিনী-র কৌতূহল হল , অযাচিত। সামনেই নামবে ও, উঠে দাঁড়ালো।  এক ঝলক উঁকি মারারও ইচ্ছে এই ভরদুপুরি artist এর শিল্পকর্মে।

ওমা! কি অদ্ভুত! একা একা আবার কাটাকুটি ও খেলা যায় নাকি? আজব ছেলে তো!

একটা অসমাপ্ত ছক, এখনও ৪টে দান বাকি।

কি করছে লোক টা? ধুরর পাগল টাগল নাকি?

ইস বা দিকের কোণে ক্রস টা না বসিয়ে ডান দিকের নিচের কোণে বসাতে পারত!  জেতার দান!

ধুরর একী? একা একা কি বোকার মতন খেলছে লোকটা! আর শালিনীও কিনা তার এই খামখেয়ালিপনায় মশগুল? কি যে হয় মাঝে মাঝে!

“Station রবীন্দ্র সরোবর” যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর এর জানান ভেসে আসতেই হাত থেকে কালো পেন টা পড়ে  গেল ছেলেটার। শালিনীর  সামনেই। খানিক ইতস্তত করেও নিচু হল পেন টা তুলতে।

ছেলেটার অবাক কেমন চমকে যাওয়া দৃষ্টি উপেক্ষা করেই শালিনী হাত বাড়াল পেন টা ফিরিয়ে দিতে। বা হাতের উন্মুক্ত ছকটা দেখে কেমন একটা বেপরোয়া খেয়াল হল শালিনীর। মুহূর্তে শেষ ক্রস টা বসিয়ে দিল সঠিক কোণটায়ে , একটা ভীত-লজ্জিত বিজয়ীর হাসি নিয়ে নেমে গেল অটোমেটিক দরজা দিয়ে। পেছন ঘুরে দেখল ছেলেটা মুখ নামিয়ে ছকটা দেখছে, ফর্সা গালে একচিলতে লালের আভা যেন।

তারপর ছিল কয়েকটা দিন, কয়েকটা থমকে যাওয়া ফাঁকা মেট্রোর পড়ন্ত বিকেল, আর কয়েকটা কাটাকুটির ছক। জিতুক,হারুক, কোনদিন ক্রস নেওয়ার ব্যতয় হয়নি শালিনীর।

নীল সেনগুপ্ত তখন ফ্রীলান্স কাজ করছে, ফটোগ্রাফি। বেখেয়ালি, আধপাগল, প্রচণ্ড লাইভলি ছেলেটায় মজতে বেশিদিন লাগেনি শান্ত, তীব্র careeristic শালিনীর।  কদিন খুউব খুব পাগলামি করে, ডানা ঝটপটিয়ে কেটে গেছিল দুজনের। ফোঁড়ন এর ঝাঁঝ টা কাটতেই কেমন একটা মিশ খাচ্ছিল না যেন সবকিছু, শালিনীর মনে হতে থাকল।

নীলের সবচেয়ে বড় পাগলামি, যেই জিনিস নিয়ে শালিনীর সঙ্গে অনেক তর্ক – বিতর্ক করেও কিছু decide হচ্ছে না, সেটা শেষমেশ মেলানো হবে কাটাকুটি দিয়ে। প্রথম দিকে শালিনী নিজেই হেসে হেসে বলত, দাঁড়া দাঁড়া , আর এঁকে ফেলত একটা চেনা ছক, সেটা নীলের হাতের ওপরেই হোক বা নিজের ফ্রেশ assignment এর শেষ পাতায়। তারপর ধীরে ধীরে ওর শালুকের  উৎসাহ টা দায় সারায় পরিণত হল, আজকাল নিতান্তই বিরক্তি, বোঝে সেটা নীল।

Jouralism এ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কয়েকমাসের মাথায় স্রেফ প্রচণ্ড চেষ্টা আর উদ্যমের জেরে একটা  leading সংবাদপত্রে চাকরি টা পেয়ে যায় শালিনী। উপরে উঠতে বেশি সময় লাগেনি ওর, অসম্ভব পরিশ্রমী আর ফোকাসড, চেনে ওকে নীল আর মনে মনে গর্ব হয় সত্যি, তার শালুক কে নিয়ে। তার Work hours এ কল বা মেসেজ পাঠানো strictly নিষেধ। যখন দিনের শেষে ফাইনাল এডিটিং চলছে, বা যখন বস অয়ন ব্যানার্জির সঙ্গে “confidential session” চলছে তখনও। “ শালুক তুই আরও পারবি দ্যাখ, অনেকটা রাস্তা বাকি এখনও তোর,” নামী রেস্তরা বনাম ময়দানের সেই পিপুল গাছ টার কাটাকুটি তে হেরে গিয়ে বলে যায় নীল, অমলিন।  শালিনী আলতো হাসে, মলিন, ধরা পরে যায় নীলের আচমকা স্ন্যাপে।

একটার পর একটা ছোটবড় কাজ ছেড়েছে নীল, শুধুমাত্র ওর এথিকস, বা ওর কাজের ধরনের সাথে খাপ না খাওয়ায়, বা নিছকই খেয়ালিপনা ওর। এর মধ্যে কয়েকটা এক্সিবিশন হয়েছে ওর ফটো নিয়ে, বেশ নামডাক ও হয়েছে, কিন্তু নীল আজও ভবঘুরে, খেয়ালি, আধপাগল; ঠিক প্রথম দিন টার মতনই। শালিনীর নিউজপেপারেই একটা ভাল অফার এসছিল নীলের, “শালুক is right. একসাথে কাজ করলে আর কাজ হবে না সারাদিন।“ নীল মনে মনে লাজুক হাসে। শালিনীর নতুন ফ্ল্যাট টায় কেমন দমবন্ধ লাগে ওর, বলেনি শালুক কে।

শালিনী অনেকদিন ধরেই ভাবছে বলে ফেলবে, কিন্তু ছেলে টা এখনও এত সরল, বাচ্চামো করে, কিছুতেই বলে উঠতে পারেনি শালিনী, প্রায় দেড় মাস হতে চলল। নিজের মনেও একটা শীতের বিকেলের কমলা-হলুদ রোদের মত খারাপ লাগা আছে, কিন্তু কোন মানেই খুজে পাচ্ছে না আর এই বোকা বোকা রিলেশন টা টিকিয়ে রাখার। অয়নের সাথে সম্পর্ক টা কদিনে বেডরুম বা অফিস রুমের বাইরে বেরিয়ে বেশ গাঢ় হয়েছে, বুঝতে পারছে ও। অয়ন সাংঘাতিক careeristic, non-comprising, practical একজন, শালিনীর মতই। কতই বা বড় শালিনীর চেয়ে, hardly ৭-৮ বছর, এখনই দু-দুটো লাক্সারি কার, second ফ্ল্যাট টাও বুকিং done।

Shit! দেখতে দেখতে anniversary টাও চলে এলো, শালিনী বেমালুম ভুলে গেছিল, নাহলে এতদিন linger করতই না ব্রেক আপ টা করতে। সেদিন দুপুরে নীলের ছোট পায়রার খুপচির মত ফ্ল্যাট টায় খানিক শরীরঘন হওয়ার পর শালিনীর চোখ পড়ে যায় টেবিল ক্যালেন্ডার টায়। ওদের দিন টা লাল গোল করে পাশে কাটাকুটি লেখা, আর একটা চেনা ছক আঁকা ।

আজ একটুও ইচ্ছে নেই শালিনীর যাওয়ার, তবু খারাপ লাগা টা কে এক ফুয়ে নিভিয়ে দিয়ে আজ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যা হওয়ার হোক, আর আটকে রাখবে না নিজেকে এই baseless সম্পর্ক টায়।

Taxi তে যেতে যেতে বুকের চিনচিন ভাব টা বাড়ছিল নীলের, আভাস কিছু একটা পাচ্ছিল ও। LBD তে ভীষণ লাস্যময়ী লাগছিল শালুক কে। নীলের চোখ ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল,  মোবাইলে নিমগ্ন শালুক কে দেখে।

CandleLight Dinner এর শেষ কোর্সে নীলের বাড়িয়ে দেওয়া হাত থেকে একটু দূরে হাত টা রেখে শালিনী casually জিজ্ঞেস করেছিল, কাজকর্ম কেমন চলছে? নীল বলেই দিল, জব টা আর নেই ড়ে শালুক, ওই রাহুল মাল টা এত ছোটলোক জানিস…”

“আহহ নীল, এটা একটা ভদ্র elegant place। ঠিকঠাক বিহেভ করতে না জানলে আসিস না এসব জায়গায়। “ শালিনীর বিরক্তি টা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। আর দেরি করেনি ও, বলেই দিল।

নীল জানত, জানতই ও। তাই আজকেও প্রথম দিনের মত অমলিন হাসল একটু।

“শালুক, যেতে দেব না তোকে, দেবই না” , হঠাৎ ছাইচাপা আগুনের মত ফুঁসে উঠল নীল। শালিনী চমকে উঠল। “নীল বোঝ তুই, আর কতদিন ছেলেমানুষি করবি?”

“না শালুক, I wont, I just wont let you go” , নীলের স্বরে চাপা গর্জন।

শালিনীর আর পোষাচ্ছিল না এই embarrassing melodrama টা। ও চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

“শালুক, যাস না, প্লিজ।“ এসব চোখের জলটল অসহ্য লাগে শালিনীর।

“শালুক, প্লিজ, আর একবার , এই খেলা টাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দে শালুক, আজও।“

শুধুমাত্র scene create করা টা কে আটকাতে শালুক রাজি হয়েছিল সেদিন। ওর রুমাল টায় নীল এঁকে ফেলেছে ততক্ষণে। ১৫ সেকেন্ডে জিতে গেল শালিনী। easy win।রুমাল টা টেনে নিয়ে ঝোরো হাওয়ার  মত বেরিয়ে যেতে যেতে শুনেছিল একটা ভেঙ্গে পড়ার আওয়াজ।

আজকাল এত ব্যস্ততা, নিজের report গুলোর বাইরে আর নিউজ গুলো সেরকম দেখাও হয়না। অয়ন এখন senior editor, editing এও হেল্প করে শালিনী প্রচুর।

আজ দুপুরে অয়নের অফিসে তলব পড়ল। অনেকক্ষণ আদরের পর অয়ন কয়েকটা নিউজ একটু দেখে নিতে বলল শালিনী কে। শেষ খবর টায়ে থমকে গেল শালিনী, সেই অনেকদিন আগের বিকেলবেলার মেট্রো তে সময় যেমন থমকে গেছিল কাটাকুটির ছকে। স্বল্পখ্যাত ফ্রীলান্স ফটোগ্রাফার নীল সেনগুপ্তর মৃত্যুর খবর। ড্রাগ ওভারডোজ।

মন টা ভারি হয়ে ছিল কেমন সারাদুপুর। বিকেলে তাই অয়নকে বলল বাইরে খেতে যাবে কোথাও। ওয়ারড্রবের থেকে একটা নীল শাড়ি বের করে পড়ল শালিনী।  পুরনো একটা রুমাল ফেলে রেখেছিল এক কোণে, একটু ইচ্ছে করেই। বের করে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল খানিক, আর হঠাৎ মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি নামল জানলার কাঁচে। মেক-আপ টা ধুয়ে যাবে, এটা বুঝে সামলে নিতে নিতে চোখ পড়ল রুমালটার ওপরের ছক টায়।।

একী!!! ডানদিকের নিচের কোণে একটা গোল বসিয়ে দিলেই তো শিওর জেতা ছিল। শালিনীর জেতার দানের ঠিক আগের চাল টা, তা না করে ও মাঝখানে বসাতে গেল কেন? মানে? তবে? আমার ক্রস? এতদিন প্রায় একটাও গেম এ না জেতা?? কোনদিন তো লক্ষই করেনি শালিনী! নিস্পাপ কিছু জেতার আনন্দ বা পরের দিকে একরাশ বিরক্তির মাঝে একদিনও তো দ্বিতীয়বারের জন্য তাকিয়ে দেখেনি ছক গুলো তে !! নিজে সবসময় ক্রস নিত, একটা নিষ্ঠুর আনন্দ ছিল ওই বোকা বোকা idiotic দেখতে গোল গুলো কে সরিয়ে দেওয়ায়। আজ তো ওরা হেরেও হারিয়ে দিল। এবার কোথায় যাবে শালিনী ? চিরকাল কাটতে শিখে এসে আজ যে বৃত্ত তে আটকা পরে গেল, কিভাবে বাঁচবে শালুক?  জানলার কাঁচে গভীর মেঘের ছায়ায় একজোড়া বিস্ফারিত চোখের জলছবি ধরা পড়ল না।

tic tac toe


Leave a comment

শেষ রাতের প্রহরী

কামরাঙা ভোরের গায়ে জল ছেটায় একটা অচেনা গন্ধ।

জল, জল, আরও জল;

“আজ আসুক বন্যা”—

রাতপ্রহরী অস্ফুটে বলে,

“মেখে নেব তোকে সারা গায়ে”

আরব্য রজনীর ব্যস্ত রাতপ্রহরীকে নিয়ে কবিতা লেখেনি কেউ।

কিন্তু বন্যা যে আজ তোমায় ভাসিয়ে নেবে রাতপ্রহরী !drowning-man

তোমার ঘুম পাবে;

মায়া-মায়া, আঠার মত ঘুম।

তুমি তলিয়ে যাবে,  বেনামী ডুবুরি পাঠাবে না কেউ।

তোমার সব রাত শেষ ।

কামরাঙা ভোরের গন্ধ আর পাবে না রাতপ্রহরীর ঠাণ্ডা নাকের নাড়ি।