ভুল রাস্তার মোড়ে


Leave a comment

 

এই অযান্ত্রিক সান্ধ্য রাজপথে ,

এই অকালবৃষ্টি-মাখা কালো বিমূর্তের আর্ত চিতকারে;

এই অশ্লীল নৈঃশব্দ্যের আনাচে কানাচে,

আমি তোমার হারিয়ে যাওয়াকে খুঁজছিলাম।

 

সেই এক উগ্র স্নিগ্ধতামাখা বিকেলে,

আমার আগুন রঙ্গা শাড়ি যেদিন আলগোছে আবিষ্ট করেছিল তোমার সত্তা কে,

সেদিনের সেই মহাপ্লাবনের স্রোতে,

হারিয়ে গেছে।

 

আমি ছিলাম বৃষ্টি বেলার কাগজের নৌকো,

তাইআরফিরেতাকাওনি,

আমাকে ভাসিয়েছিলে যখনআবেগের নগ্ন স্বপ্নিলতায়।

 

ভোরের উত্তাপহীন মেঠো পথের শিশির হয়ে বহু জন্ম পার করেছি।

তোমাকে ভুলেছি ।

কিন্তু তোমার হারিয়ে যাওয়াকে নয়।

 

তুমি বদলাওনি , একটুও।

আর তাই আমি বিভ্রান্তের মত আজ ও খুঁজছি,

সেই হারিয়ে যাওয়াটাকে।

 


Leave a comment

আমি বাংলায় জ্ঞান গাই

আমরা যারা ফেসবুক আর নিজেদের বিনি পয়সার ব্লগের বাইরে হালে পানি না পাওয়া “লেখক” , তাদের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। ১৪ই হোক বা ২১ , ফেব্রুয়ারিতে কিছু না কিছু আগডুম বাগডুম বিদ্রোহী কচকচানি পোষ্টাতে হবেই।  প্রেম দিবসের অযৌক্তিকতা হোক বা ভাষা দিবসে “বং”সমাজের ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখানো , ফেবু দেওয়াল লিখনে লাইকের সংখ্যাটা ৩০ ছাড়ালেই বেশ একটা “মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে…” গোছের আচিভমেন্ট মনে হয়। তাপ্পর যখন পরিচিত কারোর লেখায় ২০০-২৫০ লাইক দেখা যায়, তখন কাল্পনিক পেন্নাম ঠুকে “গুরুদেব” কমেন্ট করাটা অনিবার্য।

সকালের কাঁচা ঘুমটা যখন পাড়ার ক্লাবের “মোদের গরব মোদের আশা’’ দ্বারা ব্যাঘাতপ্রাপ্ত হল, মনে মনে বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় বাছা বাছা কিছু শব্দ প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে ভাষা দিবসের শুভ সূচনা ঘটল।

একবার এক বন্ধুবর বলেছিলেন, বাঙালি আদর করে বাংলায়, কিন্তু ঝাড়ে ইংরেজিতে। কথাখানা খাঁটি। তবে মাইরি বলছি, আমার বিশ্বাস সেটা স্থান-কাল-পাত্র সাপেক্ষ। ধরুন নব্য প্রেমিকার সামনে ফোন এলো কোন “বাতাসল্যাজ” কোম্পানির নেকাপিনার। তখন ইংরেজি আবশ্যক।  কিন্তু সেই প্রেমিকাকেই বিয়ে করলেন, সুখে থাকলেন ; তখন কিন্তু জিরেগুড়োটা নেই কেন সেই বচসায় শালিমার নারকোল তেলের মত বাংলাই বেরোবে। বা ধরুন ফ্লিপকার্ট আপনাকে জালি ডেলিভারি দিয়েছে। তখন তো শেক্সপীয়ারকে কবর থেকে জাগিয়ে তোলার যজ্ঞের আয়োজন করা অবশ্যম্ভাবী। অথচ “ডাক্তারবাবু কদিন ধরে লুজ মোশান কমছে না ’’-র পরবর্তী আলোচনাটা কিন্ত আপনার সুরুচিসীমা পেরিয়ে অ্যাঁ মরি বাংলা ভাষাতেই হবে। সে আপনি যতই লাল-নীল-হলুদ-(সবুজ) হয়ে যান না কেন লজ্জায়। বেরিয়ে ঝটিতি ইন্টারনেট ঘেঁটে আপনার বাংলা রোগের জার্মান/ জাপানি/ লাতিন পরিভাষা মগজস্থ করে নেবেন, পরদিন সহকর্মীদের শোনাতে তো হবে?

আজকে অনেক “আমার মেয়ে বাংলাটা ঠিক পারে না” বাবলির মা, “ইশ…রবীন্দ্রসঙ্গীত! ” ন্যাকাপিনা, “হ্যাপি ভাষা দিবস টু অল অফ ইউ” ডারপেন্দ্র দের ওপর অনেক ধিক্কার করেছেন সারাদিন ধরে।

আমারও লাগে, খারাপ লাগে মাঝে মাঝে। কিন্তু এটা ভয় পাবেন না, বাংলা ভাষা মরবে না কোনদিন। আচ্ছা আমাদের মায়েরাও তো তাদের শখ অনুযায়ী সাজগোজ করেন, তা বলে কি ঘুমোতে যাওয়ার আগের আঁচলের মা-মা গন্ধটার তারতম্য হয় কোনদিন?

বিয়েবাড়িতে হয়তো আপনার শিফন শাড়ি আর হল্টারনেক ব্লাউজ অনেক “র‍্যাভিশিং” “সেক্সি” “হট”-এর ছয়লাপ করে দিল। তা বলে কি অষ্টমীর ঢাকাই জামদানিতে মায়ের “তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, কত বড় হয়ে গেলি”-র মাহাত্ম্য কম হয়?

পিজার ওপরের এক্সট্রা চিজ আয়েশ করে “ইয়াম্মিইই…” বলে খাওয়াটা নিঃসন্দেহে স্বর্গীয় , তা  বলে কি শীতের প্রথম নলেন গুড়ের রসগোল্লা মুখে পুরে  অস্পষ্ট “আহা” –র সাথে তার কোন তুলনা হয়?

ব্রেকআপের পরপর পিঙ্ক ফ্লয়েড । হিলিং। জানি। কিন্তু অনেকদিনের পরের আলগা বর্ষার রাতে হঠাৎ ছেয়ে আসা মনকেমনের “ যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে…” ; আপনিই বলুন?

“I love you যত সহজে বলা যায়-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি” ততো সহজে বলা যায় না।” আমার নয়, হুমায়ুন আহমেদের কথা।

হিচকক। নোলান। স্করসেসি। ঘোর কাটতে সময় লাগে এক এক ক্ষেত্রে। কিন্তু হরিহরের ফিরে আসার পর সর্বজয়ার সাথে সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েননি, এমন বাঙালি খুঁজে বের করুন তো?

তাই হে বঙ্গবাসী। শঙ্কিত হইবেন না অযথা। আমাদের মা ছিলেন। আছেন। থাকবেন। বেশভূষা বদলান একটু মাঝে মাঝে নাহয়।

ভেবে দেখুন না, আমি খাই ইলিশ পাতুরি, দেশের বাড়িতে গেলে বলি “আইলাম, যাইলাম , অহন, ক্যাডা, পোলা ।’’ লাল-হলুদ ।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু খান পোস্ত । বলেন “ নোব, দোব, এতগুনো , হাঁসপাতাল।’’ সবুজ-মেরুন।

এদের মধ্যে কে বাঙালি নয় ? বলুন দেখি!

আমি লিখি “আছি, করছি, পড়ছি।’’ ময়নার মা বলে “ বুদি, টমাটমের চাটনি কইরেছ আজ? ’’ পশুপতিকাকুর রিক্সায় চাপলে একগাল হেসে বলে, “কুথায় যাবে গো মা? কাল আসো লাই কিনো ? ছুটি ছিল বটে? ’’ পড়াতে গেলে স্টুডেন্টের বাড়ির রান্নামাসি গল্প জোড়েন , “ আমাদের উখানে  মেইদের ১৮-১৯এ বিয়া হই যায়। ইসব চাকরি টাকরি করে না কেউ।’’

বাঙালি বলে অস্বীকার করব কাকে?

তবে সেইভাবে ভেবে দেখলে বাংরেজি কেও অমান্য করতে পারি না আমি।

জনৈক বাংলাদেশীয় বন্ধু বলেছিল ওপার বাংলার, ভাষা আন্দোলনের আঁতুড়ঘরের সমারোহ, আজকের দিনটায়। কবে যাওয়ার সৌভাগ্য হবে জানিনা।

ততদিন বেঁচে থাক আমার রাঢ়ী , বঙ্গালী, বরেন্দ্রী, ঝাড়খণ্ডি , কামরূপী। বেঁচে থাক আমার বাংরেজি। বেঁচে থাক আমার বাংলার মাটি, বাংলার জল। বেঁচে থাক বিশ্ববাংলা। বেঁচে থাক আমার ব এ ওকার , চ এ ওকার। বেঁচে থাক একুশে ফেব্রুয়ারির ছুতোয়  আইবি-র বদলে খাঁটি “বাংলা”র আসর। বেঁচে থাক বাঙালি, বেঁচে থাক বাংলা।

 

পুনশ্চ ঃ অধমের সীমিত জ্ঞান নিয়ে বাংলা ব্যাকরণ ,ইতিহাস, পরিভাষা নিয়ে বাগবিতণ্ডা করবার ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন গুনীজনেরা।


Leave a comment

স্বার্থ

এটা সেই দেশের সেই বৃহদাংশ ভুক্ত মেয়েটার কাহিনী , যে “আঙুর ফল টক” গোছের প্রেম দিবসের বিরোধিতা করে… আবার সুখের সময়ে ঘটা করে “ভ্যালেন্টাইন সেলফি” সাঁটায় ভার্চুয়াল দেওয়ালে। নিজের একটার পর একটা এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অসফল হওয়ার ফাঁকে যার মাথায় জেএনইউ বা ভেমুলা বা চা বাগানের কথা থাকে না। যার কলেজে “পলিটিক্স” নেই বলে গোপন গর্ববোধে লজ্জিত বোধ করে তার বন্ধুদের প্রতিবাদী সত্ত্বার দৃঢ়তার কাছে। যার ঝুলিতে ট্রামে বাসে ট্রেনে অনেক “সম্মানরক্ষার” যুদ্ধজয়ের গল্প থাকলেও , যার বাড়িতে নিত্যদিন বেঁচে থাকার অকথ্য লড়াই সত্ত্বেও তারা আদপে ভীতু… রাষ্ট্র , রাজনীতি, ধর্মীয় নিরপেক্ষতা শব্দগুলো উচ্চারণ করতে। এই তো বেঁচেবর্তে আছি চুপচাপ, কি দরকার পাশের পাঁচ জনের জীবনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলার?
মেয়েটা প্রতিবাদ জানায় না কিছুর। বোঝেই না কার পক্ষ নিয়ে , কার বিরুদ্ধ হয়ে কথা বলবে। কোনভাবে কথা বললে শ্যামও থাকবে কুলও থাকবে, মানে কিনা এই সংস্কারযজ্ঞের কাণ্ডারিরা আর ফেসবুক- ইন্টারনেট ছেয়ে ফেলা ‪#‎standwith‬হাশট্যাগে সীমাবদ্ধ প্রতিবাদীরা , কোন পক্ষই গায়ে লাগাবে না। বুঝে উঠতে না পেরে সে চুপ থাকে, তাতেও শিরদাঁড়াহীন বলে চিহ্নিত হয়।
তবু এক একদিন রাত্রে এই মেয়েটিরই মনে হয় এই র্যাতডিকাল টাইম বোম্বে পরিণত হওয়া তার দেশটায় , তার ভবিতব্য কি হত, যদি সেই ছেলেটা এখনও তার জীবনে থাকত? খুব তো শখ করে একদিন ধর্ম জাত পাত মানি না বলে বড় গলা করে দুজনে জুড়েছিল। পারল টেকাতে? সেই তো কয়েক মাসের বাড়ি থেকে পালানোর ধোঁয়াশা প্ল্যান বা নিজের অসুস্থ মায়ের সাথে দাঁতে দাঁত চেপে অসহ খারাপ ব্যবহারের নাটক , কত রিহার্সাল, কত ব্লুপ্রিন্ট… টিকলো কিছু? একদিন তো শুনতেই হল “ আব্বা আম্মু কিছুতেই মানছে না। ” তবু মেয়েটার সেইদিন টার কথা মনে পড়ে। মহরম ছিল। ছেলেটা খুব মুষড়ে ছিল, বলছিল শুধু , “ আমাদের এই দেশটা ছেড়ে চলে যেতে হবে রে, থাকতে পারব না এখানে এরকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।’’ তখনও তো মোড়ে মোড়ে পালস পোলিওর মতন গেরুয়াকরন অভিযান শুরু হয়নি। বাচ্চা মেয়েটা ভেবেছিল নিজের বাড়িতে ডেকে নেবে ওকে, ওর পরিবারকে, ওর সমাজকে।
সব নিয়মকে তুচ্ছ করে যখন পারল না, তখন একবার শেষ চেষ্টা করল উল্টোপথে। ছেলেটার হাতে উঠেছিল গীতা, আর মেয়ে টার হাতে অনুদিত কোরান। হল না, জানেন? না হওয়ারই কথা। যুগান্তরের হাওয়ায় রচিত ইতিহাসকে অস্বীকার করা যায় না।
স্বচ্ছ ভারতের আড়ালে যখন সংখ্যালঘু অভিযানের ছক কষা হচ্ছে জয় শ্রীরাম ধ্বজাবৃত তলোয়ার-কাটারির গোপন গুদামে, তখন ভারত পাকিস্তান ম্যাচের দিন ভারতের জন্য দুজনেই সোচ্চারে গলা ফাটিয়েছিল। ম্যাচ শেষে আফ্রিদির হতাশ বিবৃতি একইভাবে মনখারাপ করেছিল দুজনের।
অনলাইন গেম খেলার সময়ে কোনো পাকিস্তানি প্রতিপক্ষ থাকলে মেয়েটা খেলার শুরুতে বা শেষ সামান্য অভিবাদন জানাতে ভোলে না, অধিকাংশ দিনই courtesy টা ফেরানো হয় কিন্তু!
এটা শুনে মারতে আসবেন? মেয়েটা পাকিস্তান-সমর্থক বলবেন? বলুন। তবে এটুকু জেনে রাখবেন হিন্দুধর্মটা আপনাদের মত নিরক্ষর নিদেনপক্ষে ক্লাস ফোরের জ্ঞান পরিসীমার থেকে অনেক অনেক বড় আর নিরপেক্ষ ।
মেয়েটা তাই গর্বের সাথে বলে আমি হিন্দু। এবার মেয়েটা ভালো হয়ে গেল তো?
দাঁড়ান।
মেয়েটা সত্যি হিন্দু বলেই সে দলিত, মুসলমান , বেশ্যা সবার সাথে খাবারের থালা ভাগ করে নিতে পারে, জলের গ্লাস শেয়ার করতে পারে। একটা বিধর্মী মানুষকে বিনা দ্বিধায় ভালবাসতে পারে।

প্রথমেই বলেছিলাম , প্রতিবাদ মেয়েটা বোঝেনা। স্বার্থপর । ভীতু। কারণ সে বুঝছে বর্তমানের প্রেক্ষিতে কি ভয়ানক পাপ সে করেছে। তাই সে চুপ, কেঁচোর মত শিরদাঁড়াহীন। প্রাণের ভয়টা তারও আছে কিনা।


Leave a comment

বইমেলা ২০১৬

এক হপ্তা হয়ে গেল ২০১৬ বইমেলার, ভার্চুয়াল কিচিরমিচিরের দৌলতে যাদের জন্য এটি সেলফিমেলা বলে প্রবর্তিত হচ্ছে, তাদের কিছুই যায় আসে বলে মনে হয়না। আমরা যারা সত্যি সত্যি বই কিনলুম বলে ইকো- ফ্রেন্ডলি প্যাকেট উচিয়ে, বাসে অযাচিত লাথি- গুঁতো সহ্য করে বাড়ি ফিরি,   সমালোচনামূলক ফেবু “স্ট্যাটাসের” খসড়া মাথায় নিয়ে , তাদের অবস্থাটিও শোচনীয়। অন্তত আমার মত চিরকালীন হীনমন্যতায় ভোগা পাবলিকরা তো বটেই। পেটুক বড্ড, তবু কাল্পনিক “মান”  বাঁচানোর স্বার্থে ফুডকোর্টে বেশি সময় ব্যয় করা যাবেনা। বহুদিন সঙ্গীটির সাথে ছবি তোলা হয়নি, আবার কবে দেখাসাক্ষাৎ হবে জানা নেই, তবু তোলা হয়না, এই রে কেউ যদি দেখে ফেলে আমাদের নিয়ে পোস্ট দেয়? ঘনিষ্ঠ মহলে অনন্ত ল্যাদখোর সম্মানে ভূষিত আমার অবশ্য স্ট্যাটাস দেওয়ার বিশেষ মনোবাসনা ছিল না।তবু জনৈক অত্যুতসাহী এক ব্যক্তি -_- প্রকাশ্যে আমাকে রেকমেনড করায় এখন পশ্চাৎ রক্ষার্থে এবং উপরোক্ত কৃচ্ছসাধনের পরিপুরক হিসেবে এই পোস্ট দিতে উদ্যত হলাম।

গৌরচন্দ্রিকা অনেক হল, রচনা আরম্ভ।

 

আমার ২০১৬ বইমেলা গমন।

 

ক্লাস থ্রি থেকে শেখানো হয়েছে, যাহা ঘটিয়াছে তাহার ওপর ৩-৪ কোট রং না চড়াইলে রচনাতে ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। বেদবাক্য উপেক্ষা করেই পরীক্ষায় বইমেলা কেমন লাগলো তে লিখেছিলুম বই কেনা, খাওয়া দাওয়া, ধুলোস্নান করা (ময়দানে হত তখন) প্রভৃতি । মন্দ পাইনি সেবার। এখন নম্বর পাওয়ার সিন নেই, লাইকের লোভ আছে যদিও, তবুও আরেকবার সত্যচারণ করতে মন চাইছে।

কানে ফুল ভলিউমে লিন্‌কিন পার্ক চলছিল, মেলার কাছাকাছি আসতেই আবার সেই ভয়ে খুলে রাখলুম। ঢুকেই পেটে ২ প্যাকেট জল ও মাথায় অবধারিত সানগার্ড লাগিয়ে  তেনার লেজুড় ধরে প্ল্যান ভাঁজছিলুম, কি করব, কি কিনব, কি খাব ভেবে। গুটিকয়েক পালস পরপর মুখে পোরার ফাঁকে পরিচিত জনদের বইগুলো টপাটপ ব্যাগবন্দী করলুম। জানি যে বিদেশি ভাষার বইগুলো ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজন থেকেই আসবে, তবুও আর ৫টা বাঙালি বোদ্ধার মতো পেঙ্গুইন, অক্সফোর্ড , ক্রসওয়ার্ডের দোকানে ঢুকে  পড়ে ফেলা বইগুলোর ওপর ৪-৫ লাইন বৈমাত্রেয় ভাষায়  জ্ঞানবিচ্ছুরণ করতে লাগলুম পাশের কাঁচাপাকা বয়কাট কুর্তি – জিন্‌স বা সুদর্শন কেতাদুরস্ত ঝরঝরে ইংরিজি ছোকরাকে উদ্দেশ্য করে। বাঁধ সাধলেন সঙ্গীমহাশয়। আমার মতনই কয়েকজনকে দেখে তার দুষ্টুবুদ্ধির উদ্রেক হল। একটি- দুটি সলমান রুশদি বা পামুক বা নাইপল হাতে নিয়ে গোবেচারা মুখ করে “এইগুলা কি লেখা গো? বুজি না তো! ছবিটা ভালো লাগলো তাই দেকলাম। এত্তু বুজিয়ে দেবে? ” শুরু করলেন। পাশের শর্ট ড্রেস – লাল লিপস্টিক- হাতে আয়ান র‍্যানড / পাওলো কোয়েলহো -র  বিস্ফারিত “ডিসগাস্টেড ”  নজরের সামনে তখন কলাগাছ  শুকিয়ে আঙুল। অবশেষে জীবনে প্রথমবার মহাশয়ের পদাঙ্ক অনুসরন করলাম। বিশ্বাস করুন, ছেলেবেলার ভরদুপুরের আচার চুরি করার মত অদ্ভুত একটা আনন্দ হল।

 

তারপর আরও অনেক কিছু ঘটেছে , রটেছে , ফেটেছে।

 

চিংড়ির পাকোড়ার নামে বিস্বাদ আটার দলা  গলাধঃকরন করে দুজনে যখন হাসছি, চোখে পড়ল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টল। তার সামনে দাঁড়িয়ে সেন্সর-বিরুদ্ধ কাজ করবার মতলব করছি , দেখলুম এক হিজাব- বোরখা পরিহিত ভদ্রমহিলা তার মেয়েকে নিয়ে স্টলের সামনে গিয়ে বসলেন নির্বিকারভাবে। ঢিপঢিপ বুক নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কেটে গেল অনেকক্ষণ। স্টলকর্তারাও নির্বিকার।

বইমেলা। 🙂

 

প্যাভিলিয়নে ঢুকে ডাকফেস সেলফিতে ফটোবম্ব বা বলিভিয়ার রাজধানী ভুলে যাওয়ার মত “ইরেলেভান্ট ডিটেল ” দিয়ে আর বোর করব না। তবে অনেকদিন পর মনে হল চোখটা একটু বড়ভাবে খুলল । ক্রেডিটটা নবকলেবর নব্যবাঙালির শেষ শীতের চিরন্তনী কার্নিভাল বইমেলার প্রাপ্য। ভালো লাগলো অনেকদিন পর। আমার কথাটি ফুরল। ইতি টানলুম রচনায়।

দেখি কত নম্বর পাই।

 

পুনশ্চঃ খুব ইচ্ছে ছিল কিন্তু নানা কারনে সম্ভবপর হল না, এই বইমেলায় আমাদের নতুন বই ” বৃষ্টিভেজা রুপকথারা” প্রকাশিত হওয়ার। তবে সদ্য আসতে চলেছে, গতানুতিক ভালোবাসার গল্পের বাইরে বেরিয়ে এক ফেব্রুয়ারি স্পেশাল সংকলন ,  কিছু ডানা মেলা অচেনা পাখি। পড়ে দেখুন বা উপহার দিন, ভালো লাগবে । 🙂