রায়বাবুকে নিয়ে সকলেই লিখছেন, আমিও লিখি। 😀
রায়বাবু – পর্ব ১
ছোটবেলায় কেবল লাইন , কালার টিভি ছিল না। রবিবার বিকেল ৪ টের সময়ে ডিডি বাংলায় “সা সা নি ধা পা ধা নি”-র সুরে একটা করে সিনেমা হত, বেশিরভাগই পসেনজিত- অঞ্জন চৌধুরী- তাপস-মুনমুন। তবে ছোট থেকে বাবার কল্যাণে মোটামুটি এটা বদ্ধমূল হয়ে গেছিল যে সিনেমা = সত্যজিত তাহার উপরে নাই। তাই ২-৩ মে সহ বছরের যেই কদিন গুগাবাব বা সোনার কেল্লা বা কালেভদ্রে পথের পাঁচালি / অপুর সংসার দেখান হত, সেই দিনগুলোর জন্য মুখিয়ে থাকতাম। সেসব রবিবার সকালে কাগজে আজকের সিনেমার কলাম দেখে আগে আগেই স্নান-খাওয়া-ঘুম সেরে রেডি। পরদিন হোম টাস্ক? টেস্ট? ওই কঘণ্টা থোড়াই কেয়ার।
আমাদের বাড়িওয়ালা দের ঘরে কেবল লাইন ছিল। ওই কেবলের একটা নিজস্ব চ্যানেল হত না? যেখানে সকালে স্বামী কেন আসামী আর রাতে শোলে আর গভীর রাতে অকহতব্য ভোজপুরী বিকৃতরুচির সিনেমা দিত? সেই চ্যানেলে গুগাবাবা বা হীরক রাজা হলেই জেঠু হাঁক পারতেন। গোগ্রাসে গিলতাম সেসব, সবিস্ময়ে।
স্কুলের টিফিন পিরিয়ডে ফিসফিস হত যখন শাহরুখের দেবদাস নিয়ে, বুঝতামই না কি বলছে। আফসোস ও ছিল না তেমন, একটাই, যে অপু বা উদয়ন পণ্ডিত বা মগনলাল বা আচার্যদেব কে নিয়ে কথা বলার লোক পেতুম না বিশেষ।
একবার আমার থেকে খানিক বড় এক মাসি বেড়াতে এসেছে। তদ্দিনে সবে কেবল এসেছে। সেদিন দুপুরে পথের পাঁচালি, আমি তো স্নান করে খেয়ে দেয়ে নাচতে নাচতে টিভি চালাতে এসছি, ওমা, মাসিমনি দেখি স্টার প্লাসে বুঁদ। তার নায়িকার আজকে দ্বিতীয়বার বিয়ে, সিঁদুর পড়ানোর আগের মুহূর্তে নাকি প্রাক্তনের (মৃত ?) প্রবেশ ঘটবে।
সে এক মহাযুদ্ধ রিমোট নিয়ে। অবশেষে মায়ের হস্তক্ষেপে মাসিমনি রাজি হল রিপিট দেখে নেবে বলে। তাই অপুর পাঠশালে যাওয়া থেকে দেখতে পেলুম সেবার।
হরিহর যখন ” এই দ্যাখো না দুগগা মায়ের জন্য এই শাড়িখানা এনেছি” বলে শাড়িটা মেলে ধরল, ওমা, মাসি দেখি ঝরঝর করে কাঁদছে।
শুনলুম বাড়ি গিয়ে মাসি পরপর সব সত্যজিৎ দেখে ফেলেছে কদিনে।
ক্লাস এইটে যখন ভাড়াবাড়ি ছেড়ে এই বাড়িতে আসলুম, মনে হল পুরো সবটাই ওখানে ফেলে এলুম। এত বড় বাড়ি, চারিদিকে খোলামেলা জায়গা, চড়ুই আসে সকালে আর ঘুঘু বাসা করে ডিম পেরেছে চিলেকোঠায়, মন তখনও সিদ্ধান্তে অনড় যে জায়গাটা খুব বাজে।
পাশের ঝা চকচকে পাড়ার ঠিক মধ্যিখানে একচিলতে বেমানান বাশবাগান । কৌতূহল হল।
খোঁজ নিয়ে শুনলাম এই অঞ্চল আগে পুরোই বাঁশের ঝাড় ছিল, আর ঠিক ওই মধ্যিখানের জায়গাটুকুতে গুপী বাঘা তিন বর পেয়েছিল।
আরও শুনলাম, আমার বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে বোড়াল নিশ্চিন্দিপুর।
আর আমাকে পায় কে?
পুনশ্চ ঃ মহানুভব প্রোমোটারের দাক্ষিন্যে ওই একচিলতে জায়গাটুকুতে আজ সুদৃশ্য বহুতল। আমি সেই এপার্টমেন্টে পড়াতেও যাই।