বাড়িটায় ও একা সেদিন। বাড়িটা একটু জঙ্গল ঘেরা কেমন যেন , আশেপাশেও বাড়িটারি বিশেষ নেই। দূর থেকে মাইকে হিন্দি গান তাল আর শালগাছের মধ্যে দিয়ে ভেসে আসছে একটা মিহি আমেজের মত। সেদিন অষ্টমী। কিছুক্ষণ আগের একপশলা বৃষ্টিতে মাটির মিষ্টি গন্ধে ম ম করছে চারদিক। হৃদ একা জানলার ধারে বসে ছিল , হেডফোনে লো রিড এর “ ওয়াক অন দ্য ওয়াইল্ড সাইড” । বাড়িটায় ওর ঘরের রং গোলাপি আর আকাশির অদ্ভুত অন্তর্লীন একটা কম্বিনেশান; কী আশ্চর্য , বাবা তবে শেষে স্বীকৃতি দিল ওর পছন্দের?
হৃদ একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে বাড়িময়, ওর বাড়িতে কাঁচের ছাদ , আকাশের টুপটাপ ঝরে পড়া গল্পগুলো ফুটে উঠছে ছাদের ক্যানভাসে।
টেবিলের ওপর পিকুমামার আমেরিকা থেকে এনে দেওয়া ব্যাটম্যান আর জি আই জো বসে খোশগল্প করছে, হৃদ পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে গেল। একটু দূরে বসে নিমিদিদির থেকে না বলে আনা চাইনিজ মেয়ে পুতুলটা অদৃশ্য একটা কাউকে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে।
খোলা দরজার দিকে এগিয়ে গেল হৃদ, অন্ধকারের দুধারে ঝাউগাছ, কুচি কুচি বরফ পড়ছে , ওপারে নার্নিয়া । আড়ালে সে দাঁড়িয়ে, মাথায় অলিভ পাতার মুকুট , একমুখ হাসি নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে।
একবার ফিরে তাকাল হৃদ। দেরাজ থেকে অস্কার ওয়াইল্ড মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। হৃদ আবেশে চোখ বুজে মিলিয়ে যেতে থাকল টুকরো টুকরো হয়ে, চোখ খুললেই দ্বীপের শেষ প্রান্তে মায়ের হাতে লাগানো পেয়ারাগাছের নীচে ওরা দুজন, একসাথে, কাঁধে মাথা রেখে ।
অদ্ভুত একটা অস্বস্তিতে ঘুম ভেঙে চোখ খুলল হৃদ। হিয়া ওকে জাপটে ধরে চুমু খাচ্ছে।
হোটেলের হানিমুন স্যুইট থেকে ভিউটা অপার্থিব যাকে বলে। সকালে উঠেই স্নান সেরে নিয়ে পর্দা সরালো হৃদ। সোনা-গলা পাহারচূড়ো থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে রামধনু দ্যুতি, শৈশবীয় উল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে খরস্রোতা ঝোরাটায়। হিয়া কী যেন নাম বলল নদীটার? পাহাড়িয়া গানের গন্ধ ছিল নামটায়, ইশ কিছুতেই মনে পড়ছে না। না মেয়েটা খুঁজে খুঁজে জায়গা চুজ করেছে বটে। হিয়ার বুক করা। বিয়ের ৩ মাস আগে থেকেই হানিমুনের টিকিট কাটা, হোটেল বুকিং, ট্যুর প্ল্যান সব করে রেখেছে হিয়া।
হৃদের একবার মনে হল হিয়াকে ডেকে দেখায়। না থাক, কাল সারাদিন যা জার্নির ধকল গেছে, থাক ঘুমোক, আরও তো ৩ দিন আছে এখানে। উঠলেই অবশ্য ওই পাহাড়ি ঝোরাটার মতই প্রাণোচ্ছলতায় ঝলমল বয়ে চলবে মেয়েটা। হৃদের খুব রাগ হল নিজের ওপর।
ওদের বিয়েটা আরেঞ্জড। বাবার কলিগের মেয়ে হিয়া, অনেকদিন ধরেই পরস্পরের পারিবারিক পরিচয়।
হৃদ বরাবরই ইন্ট্রোভার্ট , প্রেম ট্রেম ও করেনি কোনোদিন। এক্সিকিউটিভ প্রমোশনটা হওয়ার পরে পরেই বাবা একদিন রাত্রে খেতে বসে প্রস্তাবটা দিল, হৃদ বিনা বাক্যব্যয়ে ছাঁদনাতলায়। এবং এখন আপাতত হিমালয়ের কোলে ।
কফি দিয়ে গেল এইমাত্র, হিয়া স্নানে ঢুকেছে। হৃদ আয়েশ করে কম্বলটা জড়িয়ে জানলার ধারে কাপটা নিয়ে বসেছে, শিল্পী ফোন করল এর মাঝে।
“কিরে দাদাভাই ! কংগো। পঁচিশেই হাতকড়াটা পরে ফেললি?”
“থ্যাঙ্কস। তোদের কি খবর বল, বিয়েতে এলি না তো? তোর শাশুড়িমা ঠিক আছেন এখন?”
“ হ্যাঁ ওই আর কি, বাড়িতেই এখন, কমপ্লিট বেড রেস্ট। ইশ কি যে মিস করলাম তোর বিয়েটা!”
“ কি আর করবি!”
“তারপর বল, খুব হানিমুন করছিস নিশ্চয়ই?” বোনের গলায় দুষ্টুমির আলতো আভাস “আমার বৌদি কোথায় এখন?”
“স্নানে গেছে।’’
“তারপর, তিনি তো সেই লেভেলের খুশি, কি বল? ’’
“হ্যাঁ সে একটু আছে বটে। ’’
“হু হু, হবে না? এতদিনের প্রেম? পুরো তো রম-কম মুভি মুভি গন্ধ ব্যাপারটায়।’’
শিল্পীর কথাটা বুঝে উঠতে সতর্ক হয়ে উঠল হৃদ।
“মানে?”
“ন্যাকামো করিস না তো দাদাভাই, অ্যাজ ইফ তুই কিছু জানিসনা…”
হৃদের প্রান্ত থেকে কোন সারাশব্দ না আসায় ঘাবড়ে গেল শিল্পী।
“ দাদাভাই তুই সত্যিই জানতিস না হিয়াদি লাইকড ইউ অল আলং ? ও তো বলে তুই রেসপন্ড করতিস না সেরকম, আমরা তো ভাবতাম ওটাই তোর সিগনেচার । ’’ মুচকি দুষ্টুমি ছুঁড়ে দেয় শিল্পী।
“শিল্পী, পরে কথা বলব রে, বেরোতে হবে।”
বাথরুমে শাওয়ার বন্ধ করতেই হিয়ার কানে আসে একটা অস্পষ্ট গোঙানির আওয়াজ, কেউ যেন বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদছে। তোয়ালেটা কোনোমতে জড়িয়ে ছিটকে বেরোয় হিয়া।
“হৃদ, অ্যাই হৃদ, কি হয়েছে তোমার? ’’ একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝলকে উদ্বিগ্নতা মিশে যায়।
সাদা চাদরের সাথে লেপটে থাকা মানুষটাকে বেশ খানিকক্ষণ ধরে ঝাঁকায় হিয়া।
হৃদ মুখ তুলে হিয়ার দিকে তাকায়, ভীষণ অপ্রত্যাশিত একটা দৃষ্টি।
“কি হয়েছে তোমার? এই তো আমি, প্লিজ বলো।’’
“ অ্যাম সরি হিয়া, অ্যাম রিয়েলি সরি।’’ হৃদ কান্নায় ভেঙে পরে। এতদিনের চেনা এত ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন মানুষটাকে এভাবে বেআব্রু দেখে হিয়ার দিশেহারা লাগে নিজেকে। হৃদের মাথাটা নিজের কোলের ওপর রেখে আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেয়। অসাবধান হয়ে আসে তোয়ালের ইচ্ছাকৃত ব্যারিকেড, সদ্যসিক্ত হিয়া হৃদের হাতটা তুলে দেয় বুকে।
হাতটা যেন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত সরে যায়, উঠে দাঁড়ায় হৃদ। বাথরুমের দরজা খোলা রেখেই মুখে জলের ঝাঁপটা দিতে থাকে, দিতেই থাকে । যেন অস্পৃশ্য কিছুর ছোঁয়ায় ওর সমস্ত কিছু চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে দ্রুত। একবুক ভাঙা চাঁদের স্বপ্ন নিয়ে হিয়া এলিয়ে পরে বিছানায়।
মানালি থেকে ফিরে আসার প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। নতুন ফ্ল্যাটটা নেওয়া থাকলেও আপাতত হৃদের বাড়িতেই আছে ওরা। নতুন জার্নি শুরুর ঝাঁঝটা অনেকটাই মিইয়ে গেছে । দুজনের মধ্যে কথা বিশেষ একটা হয় না। তবে অমিল নেই।
মানালির ওই ঘটনাটার পর আর যে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটেছে তাও নয়। হৃদকে বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও ও এড়িয়ে গেছে , শেষে হাল ছেড়ে দেয় হিয়া। বাকি দিনগুলো ভালোই কেটেছে। সেই চাঁদের আলোয় নদীর ধারে ওরা সেদিন বসেছিল, আর পাইন – ঝাউগাছেরা চুপজগতের রূপকথা শোনাচ্ছিল, হঠাৎ হৃদ নিজের থেকেই শেলি ধরল। হিয়া বিমোহিত হয়েছিল আরও একবার, যেন হিপনোটাইজ। হৃদ নিজের থেকেই ওর কপালে আলতো করে চুমু খায় সেদিন। হিয়া সামলাতে পারেনি, বুনো লতা আর পাহাড়িয়া রাতের তারাকে সাক্ষী রেখে ওদের মিলন হয়েছিল।
সেদিন হিয়া অফিস থেকে ফিরল একটু দেরি করে, হৃদ চুপচাপ ঘরে টিভি দেখছিল। বরকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য পেছন থেকে একহাতে চোখ টিপে ধরে আরেক হাতে নাকের সামনে কোলোণের বোতলটা মেলে ধরল।
“হিয়া? সে কি! তুমি কি করে জানলে?” হৃদের এরকম অমলিন হাসি অনেকদিন বাদে দেখল হিয়া। বুক থেকে যেন একটা চাপা ভার নেমে গেল।
“গেস হোওয়াট। আজকে কার সাথে দেখা হল জানো?’’
বাচ্চাদের মত ঔৎসুক্য আর উচ্ছ্বাস নিয়ে তাকানো হৃদের মুখটা দেখে একপশলা হেসে নিল হিয়া।
“মাজহার কে মনে আছে? আমার কলেজের বন্ধু, আরে তোমার সাথে একবার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম না? সেনকাকুর ছেলের জন্মদিনে?”
পলকে যেন অকালবর্ষা নেমে এলো হৃদ জুড়ে। থমথমে মেঘের মাঝে একচিলতে রোদ্দুরে হাসি ফুটিয়ে হৃদ বলল, “ ও তাই? কোথায় দেখা হল? কেমন আছে ও ?”
“ভালোই তো, উইপ্রো ছেড়ে ইনফোসিস এখন। বলল তো নতুন চাকরির চাপ তাই বিয়েতে আসতে পারেনি। কংগ্রাটস , অল দ্য বেস্ট অনেককিছু বলল- টলল। আমি তো তোমার জন্য পারফিউম খুঁজছিলাম, তখনই দেখা হল। ওই এটা নিতে বলল, বেস্টসেলার নাকি। এই এই জানো, ’’ হিয়া হাসি চেপে গলা নামিয়ে বলে , “ এখনও ওরকমই লেডিস লেডিস হাবভাব, গার্লফ্রেন্ডও তো জুটল না এতদিনেও।’’ হিয়া বলে চলে, “ এই জানো তো, প্রত্যুষ বলছিল মাজহারের সাথে নাকি ওর বাড়ির লোক যোগাযোগ রাখে না , মোস্ট প্রবাবলি হি ইজ গে, দ্যাটস হোওয়াই।’’
নিরুত্তাপ গলায় “ ও ’’ বলে উঠে যায় হৃদ। হিয়া পিছু ডাকে,
“ আরে কোথায় যাচ্ছ , শোনো না? একদিন ওকে আসতে বললাম , নতুন ফ্ল্যাটে। এই কবে যাব বলো না প্লিজ।’’ হিয়া আদুরে গলায় আবদার জানায়।
উত্তর না দিয়ে ধীরপায়ে বাথরুমে ঢুকে যায় হৃদ।
পারতপক্ষে হৃদের ফোন, ল্যাপটপে হাত দেয় না হিয়া। ওটুকু স্পেস না দিলে সম্পর্ক টেকে না বলে ও মনে করে। তবু কদিন ধরে হৃদের অদ্ভুত এই ডিপ্রেশন , অনীহা, কেমন একটা উইথড্রন যেন সবকিছু থেকে, ঘরে বসেও সারাক্ষণ কোথায় যে পড়ে আছে ঠিক নেই। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল হিয়ার ওর ফোন চেক করে। নিশ্চয়ই কোন অ্যাফেয়ারে জড়িয়ে পড়েছে, নাহলে আর কদিন বাদে বাবা হতে চলেছে, খবরটা জেনেও কি করে কেউ এতটা নিস্পৃহ থাকতে পারে? হৃদের মত ছেলে, ওর পেট থেকে কথা বার করা সহজ নয়, এতদিনে এটা হাড়ে হাড়ে বুঝে গেছে হিয়া, রাগও হয় মাঝে মাঝে খুব।
এখন হিয়ার সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হল হৃদের সাপোর্ট। দুটো প্রাণী মাত্র এই এত্ত বড় ফ্ল্যাটে, হিয়ার ফার্স্ট টাইম প্রেগনান্সি, কি করে সামলাবে? হৃদ কি বোঝে না কিছু? না কি? ভাবতে বসলেই হিয়ার বাঁধ ভেঙে জল আসে। নিজেই তো পছন্দ করেছিল লোকটাকে। খুব অভিমান হয় নিজের ওপর, মা বাবা কেন আটকাল না আমাকে? আইভরি রঙা দেওয়ালের কাছে হিয়া সব বলে, কেঁদে হালকা হয়।
সেদিন রোববার । দুপুরে আইপ্যাডে খুটখুট করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল হৃদ। হিয়া পাশে বসে বই পড়ছিল। হিয়ার মাথায় রোখ চেপে গেল হঠাৎ, মনকে ঠিক বেঠিকের হিসাবের সুযোগ না দিয়েই সন্তর্পনে ঘুমন্ত হৃদকে পেরিয়ে আইপ্যাডটা নিজের কাছে নিয়ে এলো। ফেসবুক খোলা।
আলতো করে চ্যাট লিস্টে হাত ছোঁয়াল। সবার ওপরেই মাজহারের নাম।
স্ট্রেঞ্জ? হৃদ মাজহারের সাথে যোগাযোগ রাখে? কোনোদিন বলেনি তো?
মাজহারের আনরিড টেক্সট। বিনা দ্বিধায় খোলে হিয়া।
“ বাবু? ঘুমিয়ে গেলে? লাভ ইউ। কাল আসবে কখন বলে দিও। ’’
হুহ??? দুয়ে দুয়ে চার করতে পারেনা হিয়া ঠিক, এটা মাজহারই তো? হ্যাঁ ওর ছবিই তো দেখাচ্ছে?
হিয়া বশীভুতের মত স্ক্রোল ব্যাক করতে থাকে।
দেড় ঘন্টা বাদে হৃদ ঘুম ভেঙে দেখে বিস্ফারিত জবাফুলের মত চোখ নিয়ে ওর দিকে স্থির তাকিয়ে আছে হিয়া, কোনওক্রমে অস্ফুটে বলে, “ কেন করলে হৃদ? কেন?’’
“আমি কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না, কোনওদিন না।’’
ডাঃ মিত্রের চেম্বারের ভেতরটা এসি হলেও সবসময়েই খুব সাফোকেটিং লাগে হিয়ার। দেওয়ালগুলো হাজার মানুষের হাজার দুঃখ নিয়ে মহীরুহের মত গাম্ভীর্য নিয়ে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে সবসময়।
ডাঃ মিত্র সব শুনে প্রতিবারের মতন প্যাডে খসখস করে কলম চালান। আজকাল আর জিজ্ঞেস করেন না সবকিছু, শুধু ওষুধগুলো লিখে দেন। হিয়াও ক্লান্ত, এক জিনিস বারবার বলে বলে তার বোঝ আরও বাড়ে বই কমে না। তবুও আজকে বেরনোর আগে ডাঃ মিত্র আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “ হৃদের সাথে কথা হয়?”
অল্প ঘাড় নেড়ে দরজাটা ঠেলে বেরিয়ে যায় হিয়া।
গত দু’বছরের ফ্ল্যাশব্যাক চলবে এবার সমস্ত বাসজার্নি জুড়ে।
কি করে ক্ষমা করবে নিজেকে হিয়া? মাজহারের সাথে হৃদের আলাপ? সেও তো হিয়ার সূত্রে।
হৃদের সাথে বিয়ে, জোর করে বারবার মিলিত হওয়া, হাসিমুখে সংসার যেন কোথাও কোন ফাঁক নেই, সবই তো হিয়ার নিজেরই বাবল অফ ফ্যান্টাসি। ও কি বুঝতো না হৃদের খামতিগুলো? অনীহাগুলো? তবু কেন বরাবর প্রশ্রয় দিয়ে এসছে নিজের মুখোশ পরা স্তোকবাক্য গুলোকে?
হিয়ার প্রেগনান্সির খবরটা ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্রে জেনেছিল মাজহার। সেই যে রোববার দুপুর ছিল, সেই সপ্তাহেরই বুধবার পোস্ট দিয়েছিল হিয়া। সেটা কি ইচ্ছাকৃত ছিল না? পারবে হিয়া অস্বীকার করতে আজকে? দুদিনের মধ্যে হিয়া চলে এসেছিল নিজের মায়ের কাছে। হৃদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে চায়নি আর, অভিমান, বিতৃষ্ণার বশে কিছু না ভেবেই।
দুদিন পরে হৃদ ফোন করেছিল, মাজহারের আত্মহত্যার নিউজটা দিতে শুধু। ওর গলার কান্নায় স্পষ্ট মিশে ছিল শ্লেষ , অনুচ্চ একটা ঘৃণা, হিয়ার প্রতি। সেই শেষ কথা বলা হৃদের সাথে। এখনও লিগ্যাল ডিভোর্স হয়নি ওদের ।
সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারের শেষের দিকে, সাড়ে পাঁচ মাসে মিসক্যারেজ হয় হিয়ার। এক রোববার বিকেলে। মা ছিল রান্নাঘরে, বাবা টিভিতে মগ্ন। ছাতের সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গেছিল। সাথে সাথে এ্যাম্বুলেন্স , ছোটাছুটির মাঝে চাপা পড়ে গিয়েছিল সিঁড়ির নীচে পড়ে থাকা হিয়ার কলেজ বয়েসের স্টিলেটো জোড়া।
বাসে পাশে বসা লোকটার অসহ্য চাহনি সরিয়ে একবুক ঘেন্না আর কান্নায় নিজেকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল হিয়ার। ভারী চোখের পাতায় ঝাপসা জানলা দিয়ে আকাশ ডাকল হিয়া।
বৃষ্টিস্নাত পূর্বকোণে একটা রামধনু ফুটে উঠছে ।